Saturday, January 4, 2014

তোমরা যারা বহুবিবাহ করো

ডিসেম্বর মাসটি আমার জন্য যুগপৎ বেদনা ও আনন্দের মাস। এ মাস আমাকে নবজন্মের আনন্দে উদ্বেল করে, আবার এ মাসে আমি বেদনার আঘাতে বিক্ষত হই। আমি যখন আমেরিকার বেল কর্পোরেশন ল্যাবে রিসার্চ করতাম, ডিসেম্বর মাসটা জুড়ে কিছুই করতে পারতাম না। আমার সুপারভাইজার জানতেন এই মাসটাতে আমার মনের অবস্থা কেমন হয়। তিনিও আমাকে এসময় কোন চাপ দিতেন না। আমি তুষারপাত দেখে আর স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়কার কথাগুলো ভেবে ভেবে ডিসেম্বর পার করতাম। 

নতুন প্রজন্মের মাথায়, চিন্তায়, বুদ্ধিতে আর কল্পনায় স্বাধীনতার চেতনা প্রোথিত করার জন্য সাধনা করাটাকে আমি এখন জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য করে নিয়েছি। তার ধারাবাহিকতায় আমাদের চুড়ান্ত সাফল্যও এসেছে। শাহবাগে নেমে এসেছে দেশের সর্বস্তরের মানুষ। স্বাধীনতা বিরোধী মৌলবাদী শক্তির কবর রচনা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। ভেবেছিলাম এই আনন্দ আর প্রাপ্তির মহান বছরে ডিসেম্বরটা অন্যরকম হবে। কিন্তু এ যেন নিয়তি। আমারই পরিবারের এক সদস্য, আমার প্রয়াত সহোদরের কন্যা শিলা আহমেদ এই ডিসেম্বরকে আবারও আমার জন্য শোকাবহ করে তুললো। 



আসিফ নজরুলকে আমি দীর্ঘদিন থেকে চিনি। যখন সে শহীদ জননীর সাথে সাথে মুক্তিযোদ্ধা সেজে ঘুরতো, তখনই আমি তার আসল চেহারা চিনে ফেলেছিলাম। এমনকি একদিন সরাসরি শহীদ জননীকে বলেছিলামও, আম্মা, আসিফ নজরুল আসলে একজন রাজাকার। সে গুপ্তচর হিসেবে আমাদের সব আভ্যন্তরীণ তথ্য সংগ্রহ করছে। 

আমরা বাংলাদেশীরা চিরকাল সরলপ্রাণ, আমরা বিশ্বাস করে আনন্দ পাই। আমাদের মন জাতিগতভাবেই উদার, আকাশের মতো নির্মল। তৎকালীন মুক্তিযোদ্ধারা আমার কথার সাথে একমত হননি। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে ঠিকই আসিফ নজরুলের মুক্তিযোদ্ধা মুখোশ খসে পড়েছে এবং আসল যুদ্ধাপরাধী চেহারা পুরো জাতির সামনে প্রকাশিত হয়েছে।

এইরকম ঘৃণ্য এক চেতনা-শত্রু আমার পরিবারে জায়গা করে নিয়েছে, এ সংবাদে আমি পবিত্র ডিসেম্বর মাসে শোকবিহবল হয়ে পড়েছি। কাল রাতে অবশ্য ইয়াসমিন আমাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলো যে বঙ্গবন্ধু কন্যার একমাত্র মেয়ের স্বামীও তো রাজাকার হিসেবে পরিচিত মোশাররফ সাহেবের পুত্র, এতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ক্ষতি হয়না। 

কিন্তু তবু আমি আমার মনকে বুঝাতে পারছি না। বঙ্গবন্ধু-দৌহিত্রী তো বিয়ে করেছে একটি। আর আসিফ নজরুল এবং শিলা আহমেদ দুই তিনটা করে বিয়ে করেছে। কি বিভৎস, কি কদর্য একটা বিষয়। একজন সুস্থ ও সভ্য মানুষ কিভাবে বহুবিবাহ করে আমি ভেবে পাই না। তোমরা যারা নতুন প্রজন্ম, আবহমান বাঙালী সংস্কৃতির কথা ভেবে তোমরা কখনো বহুবিবাহ করবে না। তোমাদের এখন ভাবালু হওয়ার সময়, ভালো লাগতেই পারে অনেকজনকে। কিন্তু তার জন্য বিয়ে করার কি দরকার আছে তা আমি ভেবে পাইনা। 

মনে করেছিলাম শাহবাগের সফলতার সাথে সাথে আমাদের স্বস্তি ও আনন্দের সময় এসেছে। কিন্তু ডিসেম্বরের এ নতুন বেদনায় আমি অনুভব করছি, এখনও অনেক সংগ্রামের পথ অপেক্ষা করছে আমাদের সামনে। আমাদের সবার পরিবার থেকে, নিজের ভেতর থেকে নতুন করে সংগ্রাম শুরু করতে হবে।

No comments:

Post a Comment